নূরানী পদ্ধতিতে নামাজের ওয়াজিব - নামাজের ফরজ ১৪টি - নামাজের ফরজ কয়টি জেনে নিন

ব্যাপারটা কি, আপনি কি নূরানী পদ্ধতিতে নামাজের ওয়াজিব জানতে চান, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোস্টে নূরানী পদ্ধতিতে নামাজের ওয়াজিব এবং নামাজের বাইরে ৭টি ফরজ সম্পর্কে আলোচনা করব।
এছাড়াও, আপনি এই পোস্টে 14টি ফরজ নামাজ এবং নামাজের সুন্নতে কতটি ফরজ এবং 12টি মুয়াক্কাদাহ সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আর কোন ঝামেলা ছাড়াই পোস্টে চলে যাই।

ভূমিকা

নামাযের জন্য কিছু কাজ আছে যেগুলো পর্যায়ক্রমে ফরজ ওয়াজিব এবং সুন্নাহ বিভাগে বিভক্ত। ফরয বিষয়গুলো আমাদের জন্য অপরিহার্য। ফরজ বিষয়গুলো আমাদের জন্য অপরিহার্য এবং সুন্নত সবগুলো পালন করলে নামাজের বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

কিছু ফরজ কাজ, কিছু ওয়াজিব কাজ, কিছু সুন্নত কাজ এবং কিছু নফল কাজ নামাজের সাথে সম্মিলিতভাবে করা হয়।

নামাজের ফরজ কয়টি

নামাজ শুরু করার আগে কিছু কাজ আছে এবং নামাজের ভিতরেও কিছু কাজ আছে। নামাজের ভিতরে ও বাইরে ১৩টি ফরজ রয়েছে। নামাযের ফরজ এমন কিছুকে বলা হয় যে, কেউ ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় ফরজ বাদ দিলে তার নামায হবে না।

নামায সহীহ ও কবুল হওয়ার শর্ত হলো, প্রথমে ফরজ সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। কেউ যদি ভুল করেও ফরজ না করে তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। অনেকে আছেন যারা নামাযের বাইরের কর্তব্যকে আহকাম এবং নামাযের ভেতরের কর্তব্যকে আরকান বলেন।

নামাজের বাহিরের ফরজ গুলো হচ্ছে

  • শরীর পাকা হতে হবে। যে ব্যক্তি নামাযের জন্য দাঁড়াতে চায় তার সর্বপ্রথম যা করা উচিত তা হল তার শরীরকে ভালোভাবে পবিত্র করা। শরীরের কোথাও কোন প্রকার অপবিত্রতা থাকলে প্রথমে সেই অপবিত্রতা পরিষ্কার করতে হবে যাতে শরীর তার নামাজের জন্য দাঁড়ানোর উপযোগী হয়।
  • পোশাক পরিচ্ছন্ন হতে হবে। পোশাক একজন মানুষের শরীর ঢেকে রাখে। যে পোশাকে নামায পড়া হয় তা অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। কাপড়ে কোন প্রকার অপবিত্রতা থাকলে তার নামায হবে না।
  • নামাজের স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। নামাযী যে স্থানে নামায পড়বেন তা যেন শুদ্ধ থাকে অর্থাৎ সে স্থানে কোন প্রকার অপবিত্রতা না থাকে যেমন ছোট বাচ্চাদের প্রস্রাব বা গরু-ছাগলের প্রস্রাব। এই জিনিসগুলো নামাজের জায়গায় থাকা উচিত নয়।

  • সাতার ঢেকে রাখতে হবে। সাতার ঢেকে রাখা ওয়াজিব। যদি কেউ নামাযের মাঝখানেও সতর খুলে ফেলে তাহলে তার নামায ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে অবশ্যই নামায শুরু করার পূর্বে সতর ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে সালাত শুরু করতে হবে। নামাযে মহিলাদের কন্ঠস্বরকেও সতর বলে গণ্য করা হয়, অর্থাৎ কোন মহিলা যদি নামাযে উচ্চস্বরে কোরাত পাঠ করে এবং পুরুষ শোনার পর তা শোনে, তাহলে তার নামায ভেঙ্গে যাবে। পুরুষের নামায নাভি থেকে নিচ পর্যন্ত এবং মহিলাদের নামায মাথা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত, তবে হাত মুখের বাইরে রাখা যায়।
  • কিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়তে হবে। যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে তাকে অবশ্যই পশ্চিম দিকে অর্থাৎ কিবলার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে হবে। কিবলার দিক থেকে বুক ফিরিয়ে নিলে নামায হবে না। নামাজের সময় কেউ কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও তার নামায ভেঙ্গে যাবে।
  • সময় অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে হবে। প্রতিটি প্রার্থনার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কেউ ওই ওয়াক্তের আগে নামাজ পড়লে ওই ওয়াক্তের নামাজ পড়বে না, তাই যে কোনো ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হলে সেই ওয়াক্ত আসতেই হবে। কেউ ওয়াক্তের আগে নামায পড়লে তার রক্তের নামায হবে না।
  • নামাজের জন্য দাঁড়ানোর আগে নিয়ত করতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি নিয়ত ছাড়া নামায পড়ে তাহলে তার নামায সহীহ হবে না। নামাজের ওয়াক্তের নিয়ত করতে হবে এবং যে ইমামের পিছনে নামাজ পড়বে তার জন্য নিয়ত করা ফরজ।
নামাজের বাইরে এই সাতটি কর্তব্য। কেউ যদি নামায শুরু করার আগে এই ফরযগুলোর একটি বাদ দেয় তাহলে তার নামায আরম্ভ হবে না। অতএব, আপনি যদি নামায পড়তে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই এই ফরজগুলো পূরণ করতে হবে, তাহলে আপনার নামায শুরু হবে।

নামাজের ভিতরে ফরজ হচ্ছে

  • তাকবীরে তাহরিমা বলে নামায শুরু করতে হবে। তাকবীরে তাহরিমা বলতে আল্লাহর মহিমা প্রকাশ করা এবং আল্লাহর প্রশংসা করার মতো শব্দ দিয়ে প্রার্থনা শুরু করা।
  • দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে তাহলে তাকে দাঁড়িয়ে ফরজ নামাজ পড়তে হবে। যদি কেউ কোনো কারণ ছাড়াই ফরজ নামায আদায় করে তাহলে তার নামায হবে না।
  • কেরাত পড়া। ক্বারাআত হল কোরান শরীফের যেকোন ছোট তিনটি আয়াত বা তিনটি আয়াতের সমান একটি বড় আয়াত। যদি কেউ নামাজে এ পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত না করে তাহলে তার নামাজ আদায় হবে না।
  • মাথা নত করতে হবে। কেরাত শেষ করার পর তার কাজ হলো রুকু করা। ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলবশত কেউ রুকূ ত্যাগ করলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। নামায শুদ্ধ করার জন্যও তাকে রুকু করতে হবে।
  • দুটি সিজদা করতে হবে। নামাজে রুকুর পর সিজদা করতে হবে। কেউ সিজদা করলেও তার নামাজ সহীহ হবে না। নামায শুদ্ধ ও বৈধ হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই দুটি সিজদা করতে হবে।
  • শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় রাকাত হল দুই রাকাত নামাযের শেষ বৈঠক। তৃতীয় রাকাত হলো ৩ রাকাত নামাজের শেষ বৈঠক এবং চতুর্থ রাকাত হলো চার রাকাত নামাজের শেষ বৈঠক। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়তে হবে। শেষ বৈঠক না করলে তার নামায হবে না।
এগুলো নামাজের কর্তব্য। একজন ব্যক্তিকে তার নামাযকে বৈধ করার জন্য এই দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে। যদি কেউ একটি ফরজ ভুলে যায় বা অবহেলা করে অর্থাৎ দুটি সাজদার পরিবর্তে একটি সেজদা করে বা একটি ফরজ বাদ দেয়, তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে।

নামাজের ফরজ ১৪টি

অনেকেই ১৪টি ফরজ নামাজ জানেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। 13টি ফরয নামায এবং 14টি ফরয নামায রয়েছে। যারা মনে করেন ১৪টি ফরজ নামাজ আছে তারা সম্পূর্ণ ভুল। ফরদ বলতে এমন কিছু বোঝায় যা অবশ্যই অপরিবর্তনীয়ভাবে পালন করতে হবে এবং ওয়াজিব মানে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিলে নামায ভেঙ্গে যাবে।

কিন্তু কেউ যদি ভুলে যায় এবং ওয়াজিব বাদ দেয়, তাহলে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে 14টি ফরয নামায নয় বরং 13টি ফরয এবং 14টি ফরয নামায রয়েছে।

নূরানী পদ্ধতিতে নামাজের ওয়াজিব

যারা মাদ্রাসায় পড়ে তাদের মক্তবের নূরান পদ্ধতিতে নামাজের ওয়াজিব শেখানো হয়। এভাবে ফরজ নামাজগুলো খুব সহজ ও সুন্দরভাবে শেখানো হয়, যার কারণে সেগুলো দীর্ঘ সময় মনে থাকে।
  • আলহামদু শরীফ পূর্ণ পাঠ।
  • আলহামদু এর সাথে সূরার মিল।
  • রুকু সিজদে বিলম্ব করা।
  • রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
  • দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা এবং বিলম্ব করা।
  • মধ্যবর্তী বৈঠক।
  • ডোনো মিটিংয়ে আত্তাহিয়াতু পড়া।
  • ইমাম আসার জন্য উচ্চস্বরে কেরাত পাঠ করা।
  • বিতরের নামাযে দুআতে কুনুত পড়া।
  • দুনো ঈদের নামাযে ছয় ছয় তাকবীর বলুন।
  • প্রত্যেক ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাত ক্বিরাআতের জন্য উৎসর্গ করা।
  • প্রতিটি রাকাতের দায়িত্ব হলো তার তীর সোজা রাখা।
  • প্রত্যেক রাকাতে এর ডগা সোজা রাখা ওয়াজিব।
  • আসসালামু আলাইকুম বলে নামাজ শেষ করুন।
এটি নূরানী পদ্ধতিতে ১৪টি নামাযের ওয়াজিব।

নামাজের বাহিরে 7 ফরজ

নামাজের বাইরে সাতটি কর্তব্য রয়েছে। একে বলা হয় আর্কানাম। প্রার্থনা শুরু করার জন্য একজন ব্যক্তিকে এই সাতটি দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি একজন পুরুষ বা মহিলা এই ফরজগুলোর একটিও বাদ দেন, তাহলে তার নামায মোটেই আদায় হবে না। নামাযের বাইরে সাতটি ফরয কাজ হল-
  • শরীর পাকা হতে হবে।
  • কাপড় শুকনো হতে হবে।
  • যে স্থানে নামায পড়বে সে স্থান অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
  • সতেরো হতে হবে একজন মানুষের যতগুলো আছে।
  • কিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়তে হবে।
  • সময় অনুযায়ী নামাজ পড়তে হবে অর্থাৎ যখন সময় শুরু হবে তখন নামাজ পড়তে হবে।
  • নামায পড়ার আগে যে ওয়াক্তে নামায পড়া হবে তার নিয়ত করতে হবে অর্থাৎ কেউ যোহরের নামায পড়লে যোহরের নামাযের নিয়ত করবে। যদি কোন ব্যক্তি এক নামায অন্য ওয়াক্তে আদায় করার নিয়ত করে তাহলে তার নামায হবে না।
নামায শুরু করার পূর্বে উপরে বর্ণিত সাতটি ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে।

নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা 12 টি

সুন্নত দুই প্রকার, একটিকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং অপরটিকে সুন্নতে যায়েদা বলা হয়। সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আদায় করা খুবই সওয়াবের কাজ এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আদায় করা জরুরী। সুন্নতে যায়িদা আছে অর্থাৎ অতিরিক্ত সুন্নত বাদ দিলেও কোন অসুবিধা নেই কিন্তু সুন্নতে মুয়াক্কাদা ত্যাগ করার কোন উপায় নেই।

মাক্কাদা হল বারো ওয়াক্ত নামায পড়া সুন্নত
  • উভয় হাত উঠানো মানে তাকবীরের সময় উভয় হাত উঠিয়ে তাহরিমা বলা।
  • দুই হাতে তাকবীরে তাহরিমা বলার পর দুই হাত বাঁধতে হবে।
  • সামান্য পড়া ছানা হাত মিলানোর পর সূরা ফাতেহা শুরু করার আগে পড়তে হবে।
  • আউযুবিল্লাহ পড়ুন। সূরা ফাতেহা শুরু করার আগে আউযুবিল্লাহ পড়তে হবে। আউযুবিল্লাহ পাঠ করলে নামাজে একাগ্রতা বৃদ্ধি পায় এবং শয়তান দূর হয়।
  • বিসমিল্লাহ পড়া। নামাজে বরকত আনতে সূরা ফাতিহা শুরুর আগে বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে।
  • আলহামদুলিল্লাহ আমিন বলতে হয় অর্থাৎ সূরা ফাতেহা শেষ হলে আমীন বলতে হয়। কেননা সে সময় ফেরেশতারাও আমীন বলে। আপনার আমীন যদি ফেরেশতার আমীনের সাথে মিলে যায়, তাহলে সূরা ফাতেহায় করা সকল দোয়া আপনার জন্য কবুল হবে।
  • আল্লাহু আকবার তাকবীর প্রতিটি বৈঠকে পড়তে হবে, অর্থাৎ কেরাত শেষ করে রুকুতে যাওয়ার সময়। রুকু থেকে সিজদায় যাওয়ার সময়। এই সময়ে সিজদা থেকে উঠার সময় আল্লাহু আকবার তাকবীর পাঠ করা উচিত।
  • রুকুতে তাসবীহ পড়া। রুকুতে অন্তর্ভুক্ত তাসবীহ তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার পড়তে হবে। রুকুর তাসবীহ হল সুবহানাল্লাহ রাব্বিয়াল আলা।
  • রুকু থেকে উঠার সময় সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা বলতে হবে।
  • সিজদায় থাকা অবস্থায় সিজদা তাসবীহ পাঠ করতে হবে। এই তসবি তিনবার বা সাতবার বা পাঁচবার পড়তে হবে। সিজদা তাসবীহ সুবহানাল্লাহ রাব্বিয়াল আযীম।
  • শেষ বৈঠকে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ শেষ হলে এই দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
  • শেষ বৈঠকে মাসুরা পাঠ করতে হবে। তাশাহহুদ আত্তাহিয়্যাতু শেষ করার পর দোয়ায় মাসুরাহ পড়া সুন্নত মুয়াক্কাদাহ।
এই বারোটি সুন্নাতের মুয়াক্কাদাহ। নামাজে এই বারোটি সুন্নত আদায় করার চেষ্টা করুন।

শেষ কথা

নামাজকে সুন্দর করার জন্য নামাজের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করতে হবে। নামাজকে সঠিকভাবে শুদ্ধ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ফরজ কাজগুলো করতে হবে, তাহলে আপনার নামাজ হবে একেবারে শুদ্ধ ও সুন্দর।

যদি আপনি আমার এই পোস্টটি পছন্দ করেন তবে এটি আপনার বন্ধুদের এবং আত্মীয়দের সাথে শেয়ার করুন যাতে তারাও নামাজের সমস্ত ফরজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url